বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
একজন লোক তখনই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে যখন সে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা উপরই দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তার দেয়া বিধানানুযায়ী জীবন পরিচালনা করে ও যথাযথ তার
বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কারন জীবনে সকল কল্যাণ-অকল্যাণ, জীবন-মরন, সূখ-শান্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে। এ ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় থাকতে পারে না।
যারা ঈমান আনে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি, আল্লাহ তা‘আলার
কিতাবের প্রতি, আল্লাহ তা‘আলার নবি-রাসুলদের প্রতি, আল্লাহ তা‘আলার
ফেরেশতাদের প্রতি, জীবন- মৃ্ত্যুর প্রতি, পরকালের প্রতি ও হাশরের প্রতি তাদেরকে
ঈমানদার বলা হয়। আর যারা সৎকর্ম করবে তারাই মুমিন। যারা শুধু মুখে মুখে আল্লাহ তা‘আলার ও রাসুল (সঃ) কে বিশ্বাস করে কিন্তু বাস্তবে ধর্মীয় কোন বিধান মানে না
তাদেরকে ঈমানদার বলা যায় না। ইসলামের বিধি সমূহ মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস
করা এবং যারা শরীয়াতের যাবতীয় হকুম আহকামগুলো মানিয়া চলে তারাই ঈমানদার বলে গণ্য
হবে।
ইবনে হিব্বান (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত ঈমানের শাখা -গুলো হাফেজ
ইবনে হাজার আসকালানী ফতহুল বারীতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন।
এই শাখা গুলো তিন প্রকার। (১) এমন কিছু শাখা আছে যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। (২) কতিপয় শাখা জবানের সাথে সম্পৃক্ত এবং (৩) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, শরীরের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রথমতঃ
অন্তরের কাজসমূহঃ নিয়ত ও বিশ্বাস হচ্ছে অন্তরের কাজ। ঈমানের যেসমস্ত শাখা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তার সংখ্যা ২৪টি। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল।
(১) আল্লাহর প্রতি ঈমানঃ
আল্লাহর জাত (সত্বা), সিফাত (গুণাবলী) এবং একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনয়নও আল্লাহর
প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে স্মরণ রাখা জরুরী যে, আল্লাহ্ স্বীয় সত্বা
ও গুণাবলী কোন সৃষ্টির মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ
السَّميْعُ الْبَصِيْر
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন”। (সূরা শুরাঃ ১১) (২) এই বিশ্বাস করা যে
আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্তুই ধ্বংসশীল। (৩) এমনিভাবে আল্লাহর ফেরেশতা (৪) আসমানী কিতাব (৫) নবী-রাসূল (৬) তাকদীরের ভালমন্দ
এবং (৭) আখেরাতের প্রতি ঈমান। কবরের প্রশ্নোত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, আমলনামা প্রদান, মীযান, পুলসিরাত, জান্নাত এবং জাহান্নামের
প্রতি ঈমান আনয়ন করাও অন্তরের কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত। (৮) আল্লাহকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ভালবাসা,
আল্লাহর জন্যেই কাউকে ঘৃণা করা, (৯) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা ও তাঁকে সম্মান করাও অন্তরের কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূদ পাঠ ও তাঁকে ভালবাসা ও সম্মান
প্রদর্শন তার অন্তর্ভূক্ত। (১০) তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা (১১) একনিষ্ঠতার
সাথে আল্লাহর এবাদত করা আবশ্যক- এর প্রতি ঈমান আনয়নও অন্তরের কাজের অন্তর্ভূক্ত। রিয়া তথা লোক দেখানো আমল ও মুনাফেকী পরিহার করাও এর অন্তর্ভূক্ত। (১২) তাওবা করা (১৩) আল্লাহকে ভয় করা (১৪) আল্লাহর রহমতের আশা রাখা (১৫) আল্লাহর
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা (১৬) ওয়াদা অঙ্গিকার পূর্ণ করা, (১৭) ধৈর্য ধারণ
করা (১৮) তাকদীরের লিখনের উপর সন্তুষ্ট থাকা (১৯) আল্লাহর উপর ভরসা করা (২০) বিনয়-নম্রতা
প্রদর্শণ করা, বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করাও এর অন্তর্ভূক্ত (২১) অহঙ্কার ও তাকাব্বরী
বর্জন করা (২২) হিংসা বর্জন করা (২৩) কাউকে ঘৃণা না করা এবং (২৪) ক্রোধ বর্জন করা।
দ্বিতীয়তঃ
(২)জবানের কাজসমূহঃ
ঈমানের শাখা -সমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক জবানের সাথে
তার সংখ্যা হল সাতটি। (১) তাওহীদের বাক্য অর্থাৎ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উচ্চারণ
করা (২) কুরআন তেলাওয়াত করা (৩) ইলম্ শিক্ষা করা (৪) অপরকে ইল্ম শিক্ষা দেয়া (৫) দু’আ করা (৬) যিকির
করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাও এর অন্তর্ভূক্ত (৭) অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।
তৃতীয়তঃ
(৩)শরীরের কাজসমূহঃ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক শরীরের সাথে, তার সংখ্যা হল ৩৮টি। এ শাখাগুলো আবার তিন ভাগে বিভক্ত। (ক) কতিপয় শাখা ব্যক্তি
বিশেষের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা পনেরটি। (১) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা (২) মিসকীন ও অসহায়কে খাদ্য দান
করা (৩) মেহমানের সম্মান করা (৪) ফরজ রোজা পালন করা (৫) নফল রোযা পালন করা (৬) ইতেকাফ
করা (৭) লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা (৮) হজ্জ পালন করা (৯) উমরা পালন করা (১০) কাবা ঘরের
তাওয়াফ করা (১১) দ্বীন ও ঈমান নিয়ে টিকে থাকার জন্যে দেশ ত্যাগ (১২) দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর
জন্যে কাফের রাষ্ট্র ত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে চলে যাওয়া (১৩) মানত পূর্ণ করা ১৪) ঈমান
বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও (১৫) কাফ্ফারা আদায় করা।
ঈমানের এমন কতিপয় শাখা আছে, যা ব্যক্তির সাথে
সংশ্লিষ্টদের সাথে সম্পৃক্তঃ
এগুলোর সংখ্যা মোট ৬টি। (১) বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র পবিত্র রাখা (৬) পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা
(৩) পিতা-মাতার সেবা করা, তাদের অবাধ্য না হওয়া (৪) সন্তান প্রতিপালন করা (৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়
রাখা (৬) মনিবের প্রতি অনুগত থাকা ও অধীনস্তদের সাথে নরম ব্যবহার করা।
এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, যা সকল মুসলমানের সাথে সম্পৃক্তঃ
এগুলোর সংখ্যা হচ্ছে ১৭টি। (১) ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা (২) মুসলিম জামা’তের অনুসরণ করা, (৩) শাসকদের আনুগত্য
করা (৪) মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত (৫) সৎকাজে পরস্পর
সহযোগিত করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজের নিষেধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত (৬) দন্ডবিধি কায়েম
করা (৭) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়াও জেহাদের
অন্তর্ভূক্ত (৮) আমানত আদায় করা এবং গণীমতের মালের পাঁচভাগের একভাগ আদায় করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৯) ঋণ পরিশোধ করা (১০) প্রতিবেশীর সম্মান করা (১১) মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা
(১২) হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করা এবং বৈধ পন্থায় তা খরচ করা এবং অপচয় না করা (১৩)
সালামের উত্তর দেয়া (১৪) হাঁচিদানকারীর উত্তর প্রদান করা (১৫) মানুষের ক্ষতি করা থেকে
বিরত থাকা (১৬) খেলা-তামাশা থেকে বিরত থাকা ও (১৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে
দেয়া।
এই হল ঈমানের ৬৯টি শাখা। কতিপয় শাখাকে অন্য শাখার সাথে একত্রিত গণনা না করে আলাদাভাবে হিসাব করলে ৭৭টি
হবে। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন