বিসমিল্লাহির
রহমানির রাহীম
আল-কুরআন ও আল-হাদীছে আল্লাহ্ পাক রাববুল ‘আলামীনের সত্তা, গুণাবলী, কুদরাত ও অধিকার সম্পর্কে অনেক কথা ছড়িয়ে আছে। সেই কথাগুলোর নিরিখে
অতি সংক্ষেপে মহান আল্লাহ তা’য়ালার
পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিন, সৌরজগৎ, আত্মার
জগৎ, বেহেশত-দোযজ, ফেরেশতা, জীন-ইনসানসহ গোটা মাখলুকাত
অর্থাৎ জীবজন্তু, জড়বস্তু
এবং সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন। এক কথায় বলা যায় গোটা আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে
সমস্ত কিছুই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের । তিনি সমস্ত জীবের ভাগ্যর নিয়ন্ত্রক।
তিনি সকল জীবের পালনকর্তা ও সংহারকর্তা। আল্লাহ তায়ালা শেষ দিবসের বিচারক এবং
মানুষের ভাল মন্দের প্রতিফল দিবেন। অপরিসীম বরকতময় আল্লাহ তায়ালা সমগ্র জাহানের
মালিক ও প্রতিপালক । আল্লাহ তায়ালা কোন শরীক নেই। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী ও আকাশের
রাজত্বেও মালিক , আল্লাহ
তায়ালা কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, আল্লাহ তায়ালার সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই। আল্লাহ তায়ালা
প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা সকল
সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত। মাটি বা পানির অতল তলদেশে একটি পাথরের মধ্যে এমন
একটি প্রাণী বাস করে, যা
যন্ত্র ব্যতীত মানুষের চোখে পড়বে না। সেই প্রাণী সম্পর্কেও মহান আল্লাহ তায়ালা
অমনোযোগী নন। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যা কিছু রয়েছে তার সবকিছুই মহান আল্লাহ তা’য়ালার আয়ত্বে রয়েছেন । অদৃশ্য জগতে কোথায় কি
পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে এবং এই পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ও জীব
জগতের কি অবস্থা হবে ,এই বিষয়
জানার কোনো মাধ্যম মানুষের কাছে নেই,কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার
কাছে এসব বিষয় গোপন নেই এবং তিনি তাঁর মহাশক্তিবলে এসব পরিবত’ন ঘটান এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি তিনি স্বয়ং
নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ এসব কিছুর ওপরে তাঁর বিধান কার্যকর রয়েছে। মানুষের
মন-মস্তিষ্ক কখন কি চিন্তা পরিকল্পনা করে মনের গহীনে কখন কোন মুহুতে কি কল্পনা ও
আশার উদ্রেক হয় তা জানার মতো কোন যন্ত্র আবিষ্কার করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের মনে জগৎ তথা চিন্তার জগৎ
সম্পর্কে অজ্ঞাত নয়।
সৃষ্টি কাজে মহান আল্লাহ তা’য়ালার সাথে অন্য কারো বিন্দুমাত্র অংশ ছিল না। সুতরাং মানুষের দেহ
একজন সৃষ্টি করলো আর আরেকজন তার চিন্তার জগৎ বা মনের জগৎ সৃষ্টি করলো বিষয়টি এমন
নয়। মানুষের দেহ ও মন মস্তিষ্ক তথা চিন্তার জগৎ সেই একজনই সৃষ্টি করেছেন যাঁর নাম
আল্লাহ রাব্বুল আল্লামীন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, শুধু আমরা মানব সম্প্রদায়
নয়, গোটা পৃথিবী ও তার সবকিছুর
স্রষ্টাও তিনি। সেই মহান আল্লাহ তায়ালা, তার সৃষ্টির কথা মহা গ্রন্থ কুরআনে বলেছেন, তিনি জানিয়েছেন, “তিনি এক এবং অদ্বিতীয় তিনি
ছাড়া কোন মাবূদ নাই”।
আল্লাহ্ তায়ালা এক,
অদ্বিতীয়।
আল্লাহ্ তায়ালা আববা নেই, আম্মা
নেই। আল্লাহ্ তায়ালা স্ত্রী নেই,
পুত্র
নেই, কন্যা নেই। আল্লাহ্ তায়ালা
তখনো ছিলেন যখন আর কেউ ছিলো না,
আর কিছুই
ছিলো না। আল্লাহ্ তায়ালা তখনো থাকবেন যখন আর কেউ থাকবে না, আর কিছুই থাকবে না। অর্থাৎ
আল্লাহ্ তায়ালা চিরকাল ছিলেন,
চিরকাল
আছেন, চিরকাল
থাকবেন। আল্লাহ্ তায়ালা ধ্বংসের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া সব কিছুই
ধ্বংসশীল। আল্লাহ্ তায়ালার ক্ষুধা নেই, পিপাসা নেই। আল্লাহ্ তায়ালা কিছু খান না। আল্লাহ্ তায়ালা কিছু পান
করেন না। আল্লাহ্ তায়ালার তন্দ্রা নেই, নিদ্রা নেই। আল্লাহ্ তায়ালা অন্যমনস্ক হন না। আল্লাহ্ তায়ালা কিছু
ভুলে যান না। আল্লাহ্ তায়ালাকে কোন সৃষ্টি দেখতে পায় না। কিন্তু সকল কিছু
আল্লাহ্ তায়ালার দৃষ্টির অধীন। আল্লাহ্ তায়ালার দৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই থাকা
সম্ভব নয়। আল্লাহ্ তায়ালা সব কিছুই শুনেন। মহাবিশ্বের সর্বত্র উচ্চারিত প্রতিটি
কথা ও উত্থিত প্রতিটি আওয়াজ আল্লাহ্ তায়ালা শুনতে পান। আল্লাহ্ তায়ালা সম্রাট।
মহাবিশ্ব আল্লাহ্ তায়ালার সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের মালিকানায় ও পরিচালনায়
আল্লাহ্ তায়ালার কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ্ তায়ালা কারো মুখাপেক্ষী নন।
প্রতিটি প্রাণী ও বস্তু টিকে থাকার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার মুখাপেক্ষী।
আল্লাহ্ তায়ালা সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। মহাবিশ্বের সর্বত্র
আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ্ তায়ালা মহাজ্ঞানী। আল্লাহ্
তায়ালার জ্ঞান সীমাহীন। আল্লাহ্ তায়ালা সর্ব শক্তিমান। আল্লাহ্ তায়ালা শক্তি
সীমাহীন। আল্লাহ্ তায়ালা সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টি-ক্ষমতার
শেষ নেই। আল্লাহ্ তায়ালা জীবন দেন। আল্লাহ্ তায়ালা মৃত্যু দেন। আল্লাহ্ তায়ালা
জীবিত থেকে মৃতকে এবং মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন। আল্লাহ্ তায়ালার অনুমতি ছাড়া
কারো ওপর বিপদ-মুছীবাত আসতে পারে না। আল্লাহ্ তায়ালার ক্ষমতা অ-প্রতিরোধ্য।
আল্লাহ্ তায়ালা যদি কারো কল্যাণ করতে চান তাতে বাধ সাধবার শক্তি কারো নেই।
আল্লাহ্ তায়ালা যদি কারো
আদেশ-নিষেধের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত ক্ষমতা একমাত্র তাঁর। আল্লাহ্
তায়ালার বিধানই চূড়ান্ত আইন। আল্লাহ্ তায়ালা যা করেন তার জন্য কারো কাছে
জওয়াবদিহি করতে হয় না। অন্য সবাইকে আল্লাহ্ তায়ালার নিকট জওয়াবদিহি করতে হয়।
আল্লাহ্ তায়ালা প্রথমে আসমান ও পৃথিবীকে যুক্ত অবস্থায় সৃষ্টি করেন, পরে এইগুলোকে পৃথক করে দেন।
আল্লাহ্ তায়ালা সময়ের ছয়টি অধ্যায়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন।
আল্লাহ্ তায়ালা মহাবিশ্বকে সাতটি স্তর বা অঞ্চলে বিন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালার
নির্দেশেই আসমান ও পৃথিবী সু-প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
পরিশেষে বলতে পারি যে পৃথিবীর সবগুলো গাছ দিয়ে যদি কলম বানানো হয়, সমুদ্রগুলোর পানির সাথে আরো
সাত সমুদ্রের পানি মিলিয়ে যদি কালি বানানো হয়, তবুও আল্লাহ্ তায়ালার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।
আল্লাহ্ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ।
সকল প্রশংসার মালিক এক আল্লাহ্ পাক।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন