বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
পৃথিবীতে মানবজাতি মহান আল্লাহ তা‘আলার এক অনন্য সৃষ্টি। শ্রেষ্ঠ কাজ করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি। আসমান জমিন সৃষ্টির
পর কোন এক সময় মহান আল্লাহ তা‘আলার জীন জাতি সৃষ্টি করেন। মানব জাতি সৃষ্টির পূর্বে অনেককাল যাবৎ এই জীন জাতি পৃথিবীতে বসবাস করেছিল। কিন্তু জীন জাতি এক সময়ে চরম অশান্তি ও ফেৎনা-ফাসাদে লিপ্ত হওয়ায় আল্লাহ পাক মানব জাতি সৃষ্টি করার ইচ্ছা
ফেরেশতাদের নিকট প্রকাশ করলেন।
মহাজ্ঞানী আল্লাহ তাঁর একমাত্র প্রতিনিধি
হিসাবে এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন। অতঃপর শ্রেষ্ঠত্বের এক সম্মানজনক আনুষ্ঠানিকতা পালনের ইচ্ছায় ফেরেশতাকুলকে আদম
(আঃ)-এর প্রতি সিজদা করার আদেশ করেন। শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের
প্রতিহিংসায় ইবলীস আল্লাহ আদেশ অমান্য করল। সে আদম (আঃ)-কে সিজদা
করল না, বাকী সকলেই সিজদা করল। ফলে মানব সৃষ্টিতে এক বিতর্কের অবতারণা হ’ল।
মহান প্রভু এসব কিছুই জানতেন। তিনি মানুষকে ইবলীসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সর্বদাই জয়ী থাকার জন্য জ্ঞান-বিবেক সহ
সৃষ্টি করে বহু পরামর্শ দান করেন। এদিকে ইবলীস এবং প্রাথমিক
বিজয়ে বিপর্যস্ত আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে আগমন করতে হয়। এরপরই শুরু হয় মানব জাতির চরম ক্ষতি সাধনে ইবলীস এর দুর্গম অভিযান। ইবলীসের মিথ্যা ও কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রের নিকট পরাজয়ের পর আদম (আঃ) লজ্জিত হন এবং
আল্লাহ নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরম করুণাময় আল্লাহ
তা‘আলা তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং বিশেষ বিশেষ উপদেশমালাসহ পৃথিবীতে
সাময়িক নির্বাসন দেন। এরপর আদম (আঃ)-এর পরবর্তী জীবন সাফল্যের মধ্যেই
অতিবাহিত হয়।
আদম (আঃ)-এর জন্মবৃত্তান্ত ও প্রাথমিক ইতিহাস
পবিত্র কুরআনে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, এখানে তা সংক্ষিপ্তাকারে
তুলে ধরা হ’ল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যখন তোমার মালিক (তাঁর) ফেরেশতাদের (সম্বোধন
করে) বললেন, আমি পৃথিবীতে (আমার) খলীফা বানাতে চাই;
তারা বললো, তুমি কি এমন কাউকে
(খলীফা) বানাতে চাও যে (তোমার) যমীনে (বিশৃংখলা ও) বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং (স্বার্থের
জন্যে) তারা রক্তপাত করবে, আমরাই তো তোমার প্রশংসা
সহকারে তোমার তাসবীহ পড়ছি এবং (প্রতিনিয়ত) তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আল্লাহ তা'আলা বললেন,
আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আল্লাহ তা'আলা অতঃপর (তাঁর খলীফা) আদমকে (প্রয়োজনীয়)
সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, পরে তিনি সেগুলো ফেরেশতাদের
কাছে পেশ করে বললেন, (তোমাদের আশংকার ব্যাপারে) তোমরা যদি সত্যবাদী
হও (তাহলে) তোমরা আমাকে এ নামগুলো বলো তো? ফেরেশতারা বললো
(হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি পবিত্র, আমাদের তো (এর বাইরে আর) কিছুই জানা নেই যা তুমি আমাদের শিক্ষা দিয়েছো;
তুমিই একমাত্র জ্ঞানী, একমাত্র কুশলী। আল্লাহ তায়ালা (এবার) আদমকে বললেন,
তুমি তাদের কাছে তাদের নামগুলো বলে দাও, অতএব আদম (আল্লাহর নির্দেশে) তাদের (সামনে) তাদের নামগুলো যখন
(সুন্দরভাবে) বলে দিলো, তখন আল্লাহ তা'আলা বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি
যে, আমি আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় না দেখা বস্তু জানি এবং তোমরা
যা কিছু প্রকাশ করো আর না করো আমি তাও ভালোভাবে জানি। আল্লাহ তা'আলা যখন ফেরেশতাদের বললেন, তোমরা (সম্মানের প্রতীক হিসেবে) আদমের জন্যে সাজদা করো,
অতঃপর তারা (আল্লাহর আদেশে) আদমের সামনে সাজদা করলো- শুধু ইবলীস
ছাড়া; সে সাজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করলো
এবং সে কাফিরদের দলে শামিল থেকে গেলো।’ {সূরা আল বাক্বারা,
আয়াত ৩০-৩৪}। একই বিষয়বস্ত্তর উপর
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘(স্মরণ করো,) যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, আমি (অচিরেই) ছাঁচে
ঢালা ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে মানুষ পয়দা করতে যাচ্ছি। অতঃপর যখন আমি তাকে পুরোপুরি সুঠাম করে নেবো এবং আমার রূহ থেকে (কিছু) তাতে ফুঁকে
দেবো, তখন তোমরা সবাই তার সামনে সাজদাবনত হয়ে যাবে। অতঃপর (আল্লাহর আদেশে) ফেরেশতারা সবাই সাজদা করলো, একমাত্র ইবলীস ছাড়া- সে সাজদাকারীদের দলভুক্ত হতে অস্বীকার করলো। আল্লাহ তা'আলা বললেন, তোমার কি হলো, তুমি যে সাজদাকারীদের দলে শামিল হলে না! সে
বললো (হে আল্লাহ), আমি কখনো এমন মানুষের জন্য সাজদা করতে পারি
না- যাকে তুমি ছাঁচে ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে বানিয়েছো। আল্লাহ তা'আলা বললেন, (তাই যদি বলো) তাহলে তুমি (এক্ষুণি) এখান থেকে বেরিয়ে যাও, কেননা তুমি অভিশপ্ত’ {সূরা আল হিজর, আয়াত ২৮-৩৪}।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন